Search by www.Google.com

Friday, September 3, 2010

যাঁর অস্ত্র তিনি আসামি হলেন না কেন?

আওয়ামী লীগের কর্মী ইব্রাহিম আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় এবার পুলিশ হত্যা মামলা করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (ডিবি) মশিউর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

গুলিবিদ্ধ হয়ে ইব্রাহিমের মৃত্যুর ১৯ দিন পর করা এ মামলায় কারও নাম উল্লেখ না করে ‘অজ্ঞাত ব্যক্তি’দের অভিযুক্ত করা হয়। তবে এ মামলার পরপরই পুলিশ তাদের হেফাজতে থাকা সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরীর (শাওন) গাড়িচালক কামাল হোসেন ও ব্যক্তিগত সহকারী সোহেলকে গ্রেপ্তার দেখায়। পরে কামালকে আদালতে পাঠানো হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
ইব্রাহিম হত্যাকাণ্ড নিয়ে এর আগে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ তা নেয়নি। এরপর ইব্রাহিমের ভাই আদালতে মামলা করেন। এ ঘটনায় দুটি মামলা থাকার পরও পুলিশ গতকাল আরেকটি মামলা করল। এখন ইব্রাহিমের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সরকারি দলের সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরীকে রক্ষায় পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কি না। তা ছাড়া যাঁর অস্ত্র দিয়ে ইব্রাহিম খুন হয়েছেন, সেই সাংসদ নুরুন্নবীকে আসামি করা হলো না কেন?
নতুন করে মামলা করা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইব্রাহিমের স্ত্রী রীনা ইসলাম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, পুলিশ তাঁদের মামলা ফিরিয়ে দিয়ে নিজেদের পছন্দমতো মামলা করেছে। এটা তাঁরা মানেন না।
জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মাহাবুবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের নির্দেশেই এ মামলা করা হয়েছে এবং সঠিক ধারায় মামলাটি করা হয়েছে। তিনি জানান, খুনের মামলায় কামাল হোসেন ও সোহেল বা অন্য কারও নাম উল্লেখ করা না হলেও ঘটনার বিবরণে এই দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আগের দুটি মামলা থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর আগে আদালত এ ঘটনা নিয়ে পুলিশকে একটি প্রতিবেদন দিতে বলেছিলেন। পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করার পর আদালত পুলিশকে নতুন করে মামলা করার পরামর্শ দিলে পুলিশ মামলাটি করে। এটা কাউকে রক্ষার জন্য নয়।
আদালত সূত্র জানায়, কামাল ও সোহেলকে গতকাল তিন দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করে ডিবি। সন্দেহজনক গ্রেপ্তারের মামলায় ডিবি পুলিশ এ দুজনকে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করে। মহানগর হাকিম জুলফিকার হায়াত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে ডিবি পুলিশ মহানগর হাকিম মোস্তফা শাহারিয়ারের আদালতে যায় এবং এই দুই আসামিকে শেরেবাংলা নগর থানায় করা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে। আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর সাংসদ নুরুন্নবীর গাড়িচালক কামাল হোসেন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা তা গ্রহণের জন্য আবেদন করেন। মহানগর হাকিম ইসমাইল হোসেন তাঁর খাসকামরায় কামাল হোসেনের জবানবন্দি নেন।
এদিকে আইনজীবীরা জানান, যে অস্ত্রের গুলিতে ইব্রাহিম নিহত হন সেটি ছিল সাংসদ নুরুন্নবীর। ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর মামলা করা হলেও অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৩ আগস্ট সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরীর গাড়িতে রেখে যাওয়া লাইসেন্স করা পিস্তল নাড়াচাড়া করতে থাকেন ইব্রাহিম। ঘটনার তদন্তে প্রকাশ পাওয়া যায়, আসামি কামাল হোসেন পিস্তল নাড়াচাড়া করতে বাধা দেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে পিস্তল থেকে গুলি বের হয়। ওই গুলিতে ইব্রাহিম মারা যান। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর অভিযোগ এনে মামলা করা হয়। পরে ইব্রাহিমের ভাই মাসুম আহমেদ বাদী হয়ে সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরীসহ আটজনকে আসামি করে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মামলা করেন। আদালত নালিশি মামলাটি গ্রহণ করে অপমৃত্যুর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন। আদালত অপমৃত্যুর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর হত্যা মামলার বিষয়ে আদেশ দেবেন বলে উল্লেখ করেন।
আদালত সূত্র জানায়, গতকাল আদালতে চালক কামাল হোসেন নিজেকে জড়িয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে কামাল বলেন, ইব্রাহিম সাংসদের রেখে যাওয়া পিস্তল নাড়াচাড়া করছিলেন। তিনি বাধা দেন। এতে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে গুলি বের হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে ইব্রাহিম নিহত হন। জবানবন্দিতে তিনি আরও বলেন, ঘটনার পরপরই ইব্রাহিমকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, এর আগে অপমৃত্যু মামলার এজাহারে কামালের বক্তব্য ছিল, গাড়ির ভেতরে থাকা সাংসদের পিস্তল নাড়াচাড়া করতে গিয়েই গুলিবিদ্ধ হন ইব্রাহিম। গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর তিনি অবশ্য ভিন্ন তথ্য দেন। রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কামাল বলেন, পিস্তল নিয়ে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ইব্রাহিম গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। রিমান্ডের তৃতীয় দিনে বলেছেন, পিস্তলটি নাড়াচাড়া করার সময় সেটির ম্যাগাজিন মাটিতে পড়ে যায় কিন্তু চেম্বারে তখনো একটি গুলি ছিল। পিস্তলটি খেলাচ্ছলে ইব্রাহিমের দিকে তাক করার সময় গুলিটি বেরিয়ে আসে।

1 comment:

  1. Tuition Media provides the best bd tuition near your home only in Dhaka and Chittagong district. Get your 1st job now. find something special in your life. Support your study and family by doing private tuition.

    ReplyDelete